‘আমি আমার মাকে যে কারণে বিয়ে করলাম’
এই প্রেমের গল্পের অনেক মোড়, অনেক উত্থান পতন। যার কেন্দ্রে রয়েছেন সমকামী যুগল ফিলিস আরভিং ও লিলিয়ান ফেডারম্যান।
পরিবার টিকিয়ে রাখতে ফিলিস দত্তক নিয়েছিলেন লিলিয়ানকে। ১৯৭১ সালের দিকে যখন নারী অধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল, তখন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করতেন লিলিয়ান ফেডারম্যান।
একটি নতুন বিভাগ তৈরি করার ব্যাপারে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক ফিলিস আরভিং-এর সাথে। তাদের প্রেমের গল্পের সেখান থেকেই শুরু।
আর সেই গল্পের মেয়াদ কয়েক দশকের মতো। যে গল্পে রয়েছে বিভ্রান্তিকর কিছু পরিস্থিতি, যার ফলশ্রুতিতে নিজের সঙ্গিনীকে দত্তক নেয়া আবার তাকে বিয়ে করার মতো অদ্ভুত সব ঘটনা রয়েছে।
ভালবাসা ও গোপনীয়তা
তাদের যখন পরিচয় হয়, সেসময় সমকামীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র খুব কঠিন একটি জায়গা।
বিবিসির আউটলুক অনুষ্ঠানকে লিলিয়ান বলছিলেন, "সেসময় দেশের যেকোনো প্রান্তে আমাদের অপরাধী মনে করা হতো। বেশিরভাগ সমকামীরা খুব গোপনীয়তা বজায় রাখতো।"
সেসময় সরাসরি কেউ বলতো না যে তারা সমকামী। সেসময় আমরা জানতাম আমাদের মুখ বন্ধ রাখতে হবে। আমরা নীরবে যে যার জীবন কাটাতাম।"
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা ধীরে ধীরে আঁচ করছিলেন যে কিছু একটা চলছে। লিলিয়ান বলছিলেন, "ওরা আমাদেরকে ডাকতো 'ফিলিয়ান' ও 'লিলিস', কারণ আমরা সবসময় একসাথে থাকতাম।"
"আমি যখন লেসবিয়ান সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে একটি বই লিখলাম তখন সবাই বুঝে নিয়েছিল যে আমরা দুজনে আসলে যুগল ছিলাম।"
এক পর্যায়ে এই যুগল পরিবারের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সংসার বাধার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেই যুগে বিষয়টি আইনগত দিক থেকে অসম্ভব ব্যাপার ছিল। দুজনে সেময় নিজেদের জন্য একটি অদ্ভুত সমাধান খুঁজে বের করলেন।
একত্রে বসবাসের জন্য চল্লিশের কোঠায় থাকা ফিলিস তার তিরিশের কোঠায় থাকা প্রেমিকা লিলিয়ানকে নিজের মেয়ে হিসেবে কাগজে কলমে দত্তক নেন। কিন্তু যখন ২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ হল তখন তারা বিয়েও করলেন।
যার ফলে মা মেয়ে হয়ে উঠলেন বিবাহিত দম্পতি। লিলিয়ান হেসে বলছিলেন, "আমার মনে হয় পৃথিবীর অন্য যেকোনো দম্পতির তুলনায় আমাদের আইনি বন্ধন অনেক বেশি।"
মাতৃত্ব ও বিয়ে
১৯৭৪ সালে এই প্রেমিক যুগল সিদ্ধান্ত নিলেন যে তারা সন্তান নেবেন। ফিলিসের চেয়ে লিলিয়ান বয়সে এগারো বছর ছোট ছিলেন। তারা দুজনে শরণাপন্ন হলেন গর্ভাশয়ে কৃত্রিম উপায়ে বীর্য প্রতিস্থাপনে সহায়তা করে এমন একটি ক্লিনিকের।
সেসময় বিষয়টি খুবই নতুন কিছু ছিল আর বিবাহিত না হলেতো কথাই নেই। তবে লিলিয়ান চিকিৎসককে বিষয়টি বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, "ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি যদি বাচ্চাই নিতে চাই তাহলে বিয়ে করিনি কেন।"
"আমার উত্তর ছিল, আমার বয়স ৩৪। আমার ডক্টরেট ডিগ্রি রয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমার মতো মেয়েদের ব্যাপারে পুরুষরা কিছুটা দ্বিধায় ভোগে।"
এরপর চিকিৎসক কৃত্রিম উপায়ে তার গর্ভে বীর্য স্থাপন করেন এবং তাতে সফল হন।
দুই থেকে তিন
১৯৭৫ সালে লিলিয়ান এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। যার নাম রাখা হয় এভ্রম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই জুটি উপলব্ধি করেন তারা আইনের মারপ্যাঁচে কিভাবে আটকে যাবেন।
"সেসময় আমাদের মধ্যে কোন আইনি বন্ধন ছিল না। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল যদি এভ্রম কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর আমি না থাকলে তাকে যদি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয় ফিলিসকে, তাহলে কোনভাবেই সে বৈধ অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হবে না।"
আরও উদ্বেগ তৈরি হল যদি লিলিয়ান মারা যান, ফিলিস আইনত এভ্রমের অভিভাবকত্ব পাবেন না।
সেসময় একই লিঙ্গের দুই ব্যক্তি আইনত শিশু দত্তক নিতে পারতেন না অথবা কৃত্রিম উপায়ে সন্তান নেয়াও তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
তাই এভ্রমকে দত্তক নেয়ারও কোন উপায় ছিল না।
যেভাবে তারা মা মেয়ে হলেন
দুজনে আবার সমাধান খুঁজতে লাগলেন। সেসময় ক্যালিফোর্নিয়ায় এক আইনের আওতায় প্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তির সাথে আরেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির যদি দশ বছর বয়সের তফাৎ থাকে তাহলে বয়স্কদের দত্তক বৈধ।
সেই সুযোগটা দুজনেই লুফে নিলেন এবং ফিলিস দত্তক নিলেন লিলিয়ানকে। যার ফলে ফিলিস আইনত এভ্রমের নানী হলেন। ফিলিস বলছিলেন, "এভ্রমের সাথে আমার একটা আইনি সম্পর্ক তৈরি করতে এটাই আমার একমাত্র উপায় মনে হয়েছিল।"
কিন্তু এখন এই মা ও মেয়ে, যারা একইসাথে আবার প্রেমিক যুগল, তাহলে দেশটির আইন অনুযায়ী তারা অজাচার বা ঘনিষ্ঠ রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছেন। বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাৎকারে ফিলিস কৌতুক করলেও লিলিয়ান সেটিকে একটু গম্ভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
তিনি বলেছেন, "আমাদের কাছে বিষয়টা উদ্ভট ছিল না কারণ আমাদের একে অপরের প্রতি মা ও মেয়ের অনুভূতি ছিল না। পুরো জিনিসটাই আমরা করেছিলাম আইনত যাতে আমরা তিনজন একসাথে থাকতে পারি সে জন্যে।"
"এভ্রমের যে যুগে জন্ম তখন কোন শিশুর দুটো মা ছিল না। আমাকে দত্তক নেয়া মানে সে ফিলিসকে তার বন্ধুদের কাছে নানী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতো।", বলছিলেন লিলিয়ান।"
"বিষয়টা এভ্রমের জন্য সহজ ছিল। যদিও সে বুঝতে পারতো যে ফিলিস আসলে তার আরেকজন মা।"
"এভ্রম সব সময় তার আইনি নানীকে 'মামা ফিলিস' বলে সম্বোধন করতো। এখন তার বয়স ৪৫ বছর। সে এখনো ফিলিসকে একইভাবে সম্বোধন করে।"
যেভাবে মায়ের সাথে হয়ে গেল মেয়ের বিয়ে
২০০৮ সালে দুজনের তখন অনেক বয়স, সেসময় ক্যালিফোর্নিয়ায় সম-লিঙ্গের বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হল। কোন কিছু চিন্তা না করেই যেদিন এই আইন পাশ হল তার পরের দিনই বিয়ে করে ফেললেন ফিলিস ও লিলিয়ান।
কিন্তু কাগজে কলমে তখনো তারা মা-মেয়ে। বিষয়টি অদ্ভুত থেকে অদ্ভুত হতে থাকলো, যেহেতু দত্তক সম্পর্কিত কাগজগুলো তখনও বহাল ছিল।
এরপর তারা বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করলেন সেই কারণেই তাদের বিয়ে আসলে ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুযায়ী অকার্যকর। এমন অবস্থায় তারা কিছুই করতে পারছিলেন না। আসল মা-মেয়ে না হলেও দত্তকের কারণে অজাচারের অভিযোগে তারা বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সকল অঙ্গরাজ্যে সম-লিঙ্গের বিয়ে বৈধ করা হল। সেসময় একজন আইনজীবী পরামর্শ দিয়েছিলেন দত্তকের কাগজপত্র বাতিল করে আরেক বার বিয়ে করতে। সেক্ষেত্রে তাদের বিয়ে এবার বৈধ হবে, তাদের তিনজনের সম্পর্কের একটি আইনি ভিত থাকবে।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়
প্রেম বা সম্পর্ক অনেক সময় আজীবন টেকে না। তেমনি ফিলিস ও লিলিয়ানের প্রেমেরও একপর্যায়ে সমাপ্তি হল। কিন্তু এভ্রমের কী হবে? 'মামা ফিলিস' সেক্ষেত্রে আইনত আর তার নানীও থাকছেন না কারণ দত্তকের কাগজ বাতিল করা হয়েছে।
ফিলিস ও লিলিয়ানের বিচ্ছেদের কারণে তার সাথে শুধু মা লিলিয়ানের আইনি সম্পর্ক রইল। এমন এক পর্যায়ে এসে এভ্রম ফিলিসকে অনুরোধ করলেন তাকে ছেলে হিসেবে দত্তক নিতে।
তার ইচ্ছে পূরণ করেছেন ফিলিস। দত্তক অনুষ্ঠানে এভ্রম এসেছিলেন তার নিজের স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে নিয়ে। ফিলিস বলছিলেন, "খুব অসাধারণ একটা বিষয় ছিল আমার জন্য। আমি যে শিশুকে গর্ভে থাকাকালীন রোজ রাতে গান শুনিয়েছি, যার মল-মূত্র পরিষ্কার করেছি, সে চেয়েছে আমি তার বৈধ মা হই।"
কয়েক দশক জুড়ে নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই পরিবারটি তাদের আইনি বৈধতা ও সম্পর্কে টিকিয়ে রাখল। ২০০৩ সালে নিজের আত্মজীবনীমূলক 'নেকেড ইন দ্যা প্রমিসড ল্যান্ড' বইয়ে লিলিয়ান ফেডারম্যান সেই গল্পই লিখেছেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ
একটি নতুন বিভাগ তৈরি করার ব্যাপারে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক ফিলিস আরভিং-এর সাথে। তাদের প্রেমের গল্পের সেখান থেকেই শুরু।
আর সেই গল্পের মেয়াদ কয়েক দশকের মতো। যে গল্পে রয়েছে বিভ্রান্তিকর কিছু পরিস্থিতি, যার ফলশ্রুতিতে নিজের সঙ্গিনীকে দত্তক নেয়া আবার তাকে বিয়ে করার মতো অদ্ভুত সব ঘটনা রয়েছে।
ভালবাসা ও গোপনীয়তা
তাদের যখন পরিচয় হয়, সেসময় সমকামীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র খুব কঠিন একটি জায়গা।
বিবিসির আউটলুক অনুষ্ঠানকে লিলিয়ান বলছিলেন, "সেসময় দেশের যেকোনো প্রান্তে আমাদের অপরাধী মনে করা হতো। বেশিরভাগ সমকামীরা খুব গোপনীয়তা বজায় রাখতো।"
সেসময় সরাসরি কেউ বলতো না যে তারা সমকামী। সেসময় আমরা জানতাম আমাদের মুখ বন্ধ রাখতে হবে। আমরা নীরবে যে যার জীবন কাটাতাম।"
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা ধীরে ধীরে আঁচ করছিলেন যে কিছু একটা চলছে। লিলিয়ান বলছিলেন, "ওরা আমাদেরকে ডাকতো 'ফিলিয়ান' ও 'লিলিস', কারণ আমরা সবসময় একসাথে থাকতাম।"
"আমি যখন লেসবিয়ান সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে একটি বই লিখলাম তখন সবাই বুঝে নিয়েছিল যে আমরা দুজনে আসলে যুগল ছিলাম।"
এক পর্যায়ে এই যুগল পরিবারের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সংসার বাধার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেই যুগে বিষয়টি আইনগত দিক থেকে অসম্ভব ব্যাপার ছিল। দুজনে সেময় নিজেদের জন্য একটি অদ্ভুত সমাধান খুঁজে বের করলেন।
একত্রে বসবাসের জন্য চল্লিশের কোঠায় থাকা ফিলিস তার তিরিশের কোঠায় থাকা প্রেমিকা লিলিয়ানকে নিজের মেয়ে হিসেবে কাগজে কলমে দত্তক নেন। কিন্তু যখন ২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ হল তখন তারা বিয়েও করলেন।
যার ফলে মা মেয়ে হয়ে উঠলেন বিবাহিত দম্পতি। লিলিয়ান হেসে বলছিলেন, "আমার মনে হয় পৃথিবীর অন্য যেকোনো দম্পতির তুলনায় আমাদের আইনি বন্ধন অনেক বেশি।"
মাতৃত্ব ও বিয়ে
১৯৭৪ সালে এই প্রেমিক যুগল সিদ্ধান্ত নিলেন যে তারা সন্তান নেবেন। ফিলিসের চেয়ে লিলিয়ান বয়সে এগারো বছর ছোট ছিলেন। তারা দুজনে শরণাপন্ন হলেন গর্ভাশয়ে কৃত্রিম উপায়ে বীর্য প্রতিস্থাপনে সহায়তা করে এমন একটি ক্লিনিকের।
সেসময় বিষয়টি খুবই নতুন কিছু ছিল আর বিবাহিত না হলেতো কথাই নেই। তবে লিলিয়ান চিকিৎসককে বিষয়টি বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, "ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি যদি বাচ্চাই নিতে চাই তাহলে বিয়ে করিনি কেন।"
"আমার উত্তর ছিল, আমার বয়স ৩৪। আমার ডক্টরেট ডিগ্রি রয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমার মতো মেয়েদের ব্যাপারে পুরুষরা কিছুটা দ্বিধায় ভোগে।"
এরপর চিকিৎসক কৃত্রিম উপায়ে তার গর্ভে বীর্য স্থাপন করেন এবং তাতে সফল হন।
দুই থেকে তিন
১৯৭৫ সালে লিলিয়ান এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। যার নাম রাখা হয় এভ্রম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই জুটি উপলব্ধি করেন তারা আইনের মারপ্যাঁচে কিভাবে আটকে যাবেন।
"সেসময় আমাদের মধ্যে কোন আইনি বন্ধন ছিল না। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল যদি এভ্রম কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর আমি না থাকলে তাকে যদি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয় ফিলিসকে, তাহলে কোনভাবেই সে বৈধ অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হবে না।"
আরও উদ্বেগ তৈরি হল যদি লিলিয়ান মারা যান, ফিলিস আইনত এভ্রমের অভিভাবকত্ব পাবেন না।
সেসময় একই লিঙ্গের দুই ব্যক্তি আইনত শিশু দত্তক নিতে পারতেন না অথবা কৃত্রিম উপায়ে সন্তান নেয়াও তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
তাই এভ্রমকে দত্তক নেয়ারও কোন উপায় ছিল না।
যেভাবে তারা মা মেয়ে হলেন
দুজনে আবার সমাধান খুঁজতে লাগলেন। সেসময় ক্যালিফোর্নিয়ায় এক আইনের আওতায় প্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তির সাথে আরেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির যদি দশ বছর বয়সের তফাৎ থাকে তাহলে বয়স্কদের দত্তক বৈধ।
সেই সুযোগটা দুজনেই লুফে নিলেন এবং ফিলিস দত্তক নিলেন লিলিয়ানকে। যার ফলে ফিলিস আইনত এভ্রমের নানী হলেন। ফিলিস বলছিলেন, "এভ্রমের সাথে আমার একটা আইনি সম্পর্ক তৈরি করতে এটাই আমার একমাত্র উপায় মনে হয়েছিল।"
কিন্তু এখন এই মা ও মেয়ে, যারা একইসাথে আবার প্রেমিক যুগল, তাহলে দেশটির আইন অনুযায়ী তারা অজাচার বা ঘনিষ্ঠ রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছেন। বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাৎকারে ফিলিস কৌতুক করলেও লিলিয়ান সেটিকে একটু গম্ভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
তিনি বলেছেন, "আমাদের কাছে বিষয়টা উদ্ভট ছিল না কারণ আমাদের একে অপরের প্রতি মা ও মেয়ের অনুভূতি ছিল না। পুরো জিনিসটাই আমরা করেছিলাম আইনত যাতে আমরা তিনজন একসাথে থাকতে পারি সে জন্যে।"
"এভ্রমের যে যুগে জন্ম তখন কোন শিশুর দুটো মা ছিল না। আমাকে দত্তক নেয়া মানে সে ফিলিসকে তার বন্ধুদের কাছে নানী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতো।", বলছিলেন লিলিয়ান।"
"বিষয়টা এভ্রমের জন্য সহজ ছিল। যদিও সে বুঝতে পারতো যে ফিলিস আসলে তার আরেকজন মা।"
"এভ্রম সব সময় তার আইনি নানীকে 'মামা ফিলিস' বলে সম্বোধন করতো। এখন তার বয়স ৪৫ বছর। সে এখনো ফিলিসকে একইভাবে সম্বোধন করে।"
যেভাবে মায়ের সাথে হয়ে গেল মেয়ের বিয়ে
২০০৮ সালে দুজনের তখন অনেক বয়স, সেসময় ক্যালিফোর্নিয়ায় সম-লিঙ্গের বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হল। কোন কিছু চিন্তা না করেই যেদিন এই আইন পাশ হল তার পরের দিনই বিয়ে করে ফেললেন ফিলিস ও লিলিয়ান।
কিন্তু কাগজে কলমে তখনো তারা মা-মেয়ে। বিষয়টি অদ্ভুত থেকে অদ্ভুত হতে থাকলো, যেহেতু দত্তক সম্পর্কিত কাগজগুলো তখনও বহাল ছিল।
এরপর তারা বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করলেন সেই কারণেই তাদের বিয়ে আসলে ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুযায়ী অকার্যকর। এমন অবস্থায় তারা কিছুই করতে পারছিলেন না। আসল মা-মেয়ে না হলেও দত্তকের কারণে অজাচারের অভিযোগে তারা বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সকল অঙ্গরাজ্যে সম-লিঙ্গের বিয়ে বৈধ করা হল। সেসময় একজন আইনজীবী পরামর্শ দিয়েছিলেন দত্তকের কাগজপত্র বাতিল করে আরেক বার বিয়ে করতে। সেক্ষেত্রে তাদের বিয়ে এবার বৈধ হবে, তাদের তিনজনের সম্পর্কের একটি আইনি ভিত থাকবে।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়
প্রেম বা সম্পর্ক অনেক সময় আজীবন টেকে না। তেমনি ফিলিস ও লিলিয়ানের প্রেমেরও একপর্যায়ে সমাপ্তি হল। কিন্তু এভ্রমের কী হবে? 'মামা ফিলিস' সেক্ষেত্রে আইনত আর তার নানীও থাকছেন না কারণ দত্তকের কাগজ বাতিল করা হয়েছে।
ফিলিস ও লিলিয়ানের বিচ্ছেদের কারণে তার সাথে শুধু মা লিলিয়ানের আইনি সম্পর্ক রইল। এমন এক পর্যায়ে এসে এভ্রম ফিলিসকে অনুরোধ করলেন তাকে ছেলে হিসেবে দত্তক নিতে।
তার ইচ্ছে পূরণ করেছেন ফিলিস। দত্তক অনুষ্ঠানে এভ্রম এসেছিলেন তার নিজের স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে নিয়ে। ফিলিস বলছিলেন, "খুব অসাধারণ একটা বিষয় ছিল আমার জন্য। আমি যে শিশুকে গর্ভে থাকাকালীন রোজ রাতে গান শুনিয়েছি, যার মল-মূত্র পরিষ্কার করেছি, সে চেয়েছে আমি তার বৈধ মা হই।"
কয়েক দশক জুড়ে নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই পরিবারটি তাদের আইনি বৈধতা ও সম্পর্কে টিকিয়ে রাখল। ২০০৩ সালে নিজের আত্মজীবনীমূলক 'নেকেড ইন দ্যা প্রমিসড ল্যান্ড' বইয়ে লিলিয়ান ফেডারম্যান সেই গল্পই লিখেছেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ
No comments:
Post a Comment
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me.