গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এসবের মধ্যে ঘুম না হওয়া একটি বড় সমস্যা। ভালো ঘুম না হলে শরীর এবং মন কোনটাই ভাল থাকেনা। আবার ঘুমের যেসব ওষুধ আছে গর্ভাবস্থায় সেসবের ব্যবহার একেবারেই নিরাপদ নয়। তাই গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়া একটি বড় ধরনের সমস্যা। গর্ভাবস্থায় ঘুম না হবার বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন-
১. গর্ভাবস্থায় বারবার প্রস্রাব হয়। এভাবে একটানা ঘুম ব্যাহত হয়।
২. গর্ভকালে বুক জ্বালা দেখা দেয়। আর বুক জ্বললে কারো পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়। এসময় ইসোফেগাসের নিচের স্ফিংটার ঢিলা হয়ে যায় ফলে এসিড ইসোফেগাসের মধ্যে চলে এসে বুক জ্বালা ঘটায়।
৩. গর্ভকালীন সময়ে হাত-পা ব্যথা করে। অনেক সময় পায়ের মাংসপেশীতে খিল ধরে। ফলে ঠিকমত ঘুম আসতে চায়না।
৪. গর্ভাবস্থায় মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এসময় মনের ভেতরে অজানা আশংকা বা ভয় তৈরী হয়। এই কারণেও ঠিকমত ঘুম হয়না।
৫. গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনও ঘটে। এসব কারণেও ঘুমের ব্যাঘাত হয়।
৬. অনেক সময় বিয়ের পরপরই বাচ্চা চলে আসে। শ্বশুর বাড়ীতে ভালভাবে আত্মীয়তা গড়ে উঠার আগেই যদি সন্তান পেটে আসে তখন এক ধরনের মানসিক চাপ পড়ে। এছাড়া অনেক সময় শ্বশুর বাড়ীর পরিবেশও বিরূপ থাকে। এসব কারণে ঘুম ঠিকমত আসতে চায়না।
গর্ভাবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত বড় একটি সমস্যা। ভালো ঘুম না হলে ঘুব খারাপ লাগে। তখন কোন কিছুই আর ভালো লাগেনা। তাই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চললে কষ্ট অনেক কমে যাবে। নিয়মগুলো হছে-
১. ভয় পাওয়া যাবেনা। এসময় ঘুম না হলে বাচ্চার কোন ক্ষতি হয়না। এটা পরিস্কারভাবে বুঝতে হবে।
২. হালকা ব্যায়াম করলে রাতে ভাল ঘুম হয়। তবে সবধরনের ব্যায়াম করা যাবেনা। তাতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
৩. চকলেট, চা, কফি বর্জন করতে হবে। এগুলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে। ফলে ভাল ঘুম হয়না। খেলেও সকালের দিকে খাওয়া যেতে পারে। সন্ধ্যার পর খাওয়া একবারেই অনুচিত।
৪. সারাদিন বেশী করে পানি খেতে হবে। সন্ধ্যার পর পানি খাবার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। ফলে বার বার প্রস্রাব হবে না এবং গর্ভবতী স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুমাতে পারেবন।
৫. সঠিক সময়ে রাতের খাবার খেতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।
৬. শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের এ ব্যাপারে ভূমিকা আছে। তাদের সহানুভূতি গর্ভবতীকে অনেক সাহস যোগায়। এছাড়া স্বামীরও বড় ভূমিকা আছে। মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলে
সহজেই ঘুম আসে।
৭. অনেক সময় নিজের বাড়ীতে গেলে অবস্থার উন্নতির হয়। নিজের বাড়ির চেনা পরিবেশ মনকে শান্ত করে। মন শান্ত হলে ঘুমও ভাল হয়।
৮. নিয়মিত গোসল করা উচিত। এতে শরীরে পরিচ্ছন্ন অনুভূতি সৃষ্টি হয়। ভাল ঘুমও হয়।
৯. ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত গর্ভাবস্থায়। ফলে হাত পায়ের ব্যথা কমে আসে এবং খিল ধরা বন্ধ হয়। তবে প্রথম তিন মাসে আয়রণ ও ক্যালসিয়াম দেওয়া উচিত নয়।
১০. ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে। তারপর হালকা গরম দুধ খেলে সহজেই ঘুম চলে আসে।
১১. অনেকে ঘুমানোর জন্য স্লিপিং পিল এবং এলকোহাল খান। এটি কখনই করা যাবেনা। এর ফলে বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
১২. এরপরেও কাজ না হলে চিকিত্সকের কাছে যেতে হবে। গর্ভাবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত একটি বড় সমস্যা। তবে উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে সমস্যা অনেক কমে যাবার কথা। সুস্থ মা-ই সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়। সুতরাং সচেতনতা প্রয়োজন।
No comments:
Post a Comment
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me.