বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম তিনজন রোগী রবিবার শনাক্ত হয়েছে। সর্বপ্রথম চীনের উহানে গত বছরের শেষ দিকে ভাইরাসসৃষ্ট এই রোগের সূচনা। এরই মধ্যে বিশ্বের শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এর আঘাতে মারা গেছে অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ, আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক।
এই ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। এমন কোনো চিকিৎসা নেই যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার পাশপাশি এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথাও বলা হচ্ছে।
করোনা কীভাবে ছড়ায়-
করোনা একটি সংক্রামক ভাইরাসের নাম। অন্য নাম ২০১৯-এনসিওভি। এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। একাধিক প্রজাতি থাকলেও করোনার সাতটি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই ‘মিউটেট’ করছে অর্থাৎ গঠন পরিবর্তনের মাধ্যম নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ফলে এটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
এর বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। একজনের মাধ্যমে থেকে অন্য মানুষের দেহে ছড়াতে পারে। বিবিসির তথ্য মতে, মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটিয়ে শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনা ছড়ায়।
এর সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং কাশি। এর ফলে দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণ প্রকাশে প্রায় পাঁচ দিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ জ্বর। এরপর শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
করোনাকে সাধারণভাবে ভয়ঙ্কর মনে করা হলেও কতটা বিপদজনক তা একটা প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই শতাংশ মারা গেছেন, হয়তো আরও মৃত্যু হতে পারে।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তির ৬ ফুট নাগালের মধ্যে থাকলে সুস্থ মানুষের রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে আক্রান্ত মানুষের হাঁচি, কাশি, নাক ঝাড়া বা নাকে-মুখে হাত দিয়ে সুস্থ মানুষের সংস্পর্শে এলে, অন্যজনেরও অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে। সবচেয়ে মুশকিল হলো জীবাণু সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে যায়। মূলত প্রাণীর শরীর থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের কোনো অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি। তাই যে কোনো মানুষ এ ধরনের রোগীর সংস্পর্শে এলে রোগাক্রান্ত হতে পারেন। এটি মারাত্মক হয়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের মধ্যে। এ ছাড়া যারা হার্ট, ফুসফুস বা ক্যানসারের মত অসুখে ভুগছেন, ডায়াবেটিস আছে অথবা কোনো কারণে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, তাদের ক্ষেত্রেই ভাইরাসটি নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
মোটাদাগে করোনায় অসুস্থ ব্যক্তির সাধারণত ঠান্ডাজনিত লক্ষণ থাকে। তার মাধ্যমে সুস্থ মানুষের চোখ, নাক ও মুখ দিয়ে ঢুকতে পারে করোনাভাইরাস।
এভাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভাইরাসটি একজন মানুষের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে কলম, ট্রেনের হাত রাখার জায়গা, চায়ের কাপ, টিস্যু, সিঁড়ির হাতল, লিফটের সুইচ, কম্পিউটারের মাউস, চামচ বা চপস্টিকের মতো বস্তুর বিষয়েও সতর্কতা জরুরি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে চীনসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে যে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে - তাতে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, সংক্রমিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪শ লোক।
ভাইরাসটি কোন একটা প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে ছড়াতে আবার নিজের জিনগত গঠনে সবসময় পরিবর্তন আনছে - যাকে বলে মিউটেশন।
তাই এ ভাইরাস হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, এমন আশংকা রয়েছে।
কিন্তু এ ভাইরাসটির প্রকৃতি এবং কিভাবেই বা তা রোধ করা যেতে পারে - এ সম্পর্কে এখনো বিজ্ঞানীরা বিশদভাবে জানার চেষ্টা করছেন।
সার্স বা ইবোলার মতো নানা ধরণের প্রাণঘাতী ভাইরাসের খবর মাঝে মাঝেই সংবাদ মাধ্যমে আসে। এই করোনাভাইরাস তার মধ্যে সর্বশেষ।
কিন্তু এটি কি আজ-আছে-কাল-নেই ধরণের কোন ভাইরাস? নাকি এটা তার চেয়ে অনেক বেশি বিপদজনক?
করোনাভাইরাস কী এবং কীভাবে ছড়ায়?
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায় নি।
ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই 'মিউটেট করছে' অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে - যার ফলে এটি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
এটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে পারে এবং সোমবারই বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।
এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ।
এক দশক আগে সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।
এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি লোক।
আর একটি ভাইরাসজনিত রোগ ছিল মিডল ইস্টার্ন রেস্পিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স।
২০১২ সালে এতে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের ।
আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে কী লক্ষণ দেখা যায়?
করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি।
কিন্তু এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তার পর দেখা দেয় শুকনো কাশি।
এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট এবং তখন কোন কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
এই ভাইরাস কত বিপজ্জনক সেটা একটা প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই শতাংশ মারা গেছেন, হয়তো আরো মৃত্যু হতে পারে। তা ছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা চিহ্নিত হয় নি।
তাই এ ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ংকর তা এখনো স্পষ্ট নয়।
'ভাইরাসটি ছড়িয়েছে কোন প্রাণী থেকে'
মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১শে ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এর পর ১১ই জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা এখনও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে পারেন নি বিশেষজ্ঞরা।
তবে তারা বলছেন, সম্ভবত কোন প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোন মানুষের দেহে ঢুকেছে, এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।
সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকে। মার্স ভাইরাস ছড়ায় উট থেকে।
এর সাথে উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজারে গিয়েছিল এমন লোকদের সম্পর্ক আছে বলে বলা হচ্ছে।
ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো
কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনাভাইরাস বহন করতে পারে। তবে উহানের ওই বাজারে জ্যান্ত মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, এবং সাপ বিক্রি হতো।
হয়তো এগুলোর কোন একটি থেকে এই নতুন ভাইরাস এসে থাকতে পারে।
ভাইরাসটি এখন চীনের অন্যান্য শহর এবং চীনের বাইরে থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এক ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এই ব্যক্তি উহানে গিয়েছিলেন বলেও জানানো হয়।
এর কি কোন চিকিৎসা আছে?
যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই, এবং এমন কোন চিকিৎসা নেই যা এ রোগ ঠেকাতে পারে।
তাহলে এর হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় কী?
একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে বা এ ভাইরাস বহন করছে - তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
তা ছাড়া ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন বার বার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্যাব্রিয়েল লিউং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এ নির্দেশনায় বলছেন, হাত সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, বার বার হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে নাক বা মুখ ঘষবেন না, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরতে হবে।
"আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে মুখোশ পরুন, আর নিজে অসুস্থ না হলেও, অন্যের সংস্পর্শ এড়াতে মুখোশ পরুন" - বলেন তিনি।
উহান শহরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে কমপক্ষে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী নিজেরাই এতে আক্রান্ত হয়েছেন।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত একটি বহুল আলোচিত রোগ। এটি মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন পশু, বিড়াল, উট ও বাদুড়ের মধ্যে দেখা যায়। সাধারণত প্রাণিদেহে সংক্রমিত করোনা ভাইরাসগুলি মানুষকে আক্রান্ত করে না। সম্প্রতি চীনের উহান নামক একটি শহরে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বর্তমানে শনাক্তকৃত বেশির ভাগ রোগী উহান শহরের একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুর বাজার থেকে আক্রান্ত হয়েছে।সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত এই রহস্যজনক ভাইরাস থেকে ২ হাজার ৭৪৪ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮১ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনের হুবেই প্রদেশের অন্তর্গত উল্লিখিত উহান শহরের কোনো না কোনোভাবে ভ্রমণ করেছিলেন, নয়তো সেখানকার বাসিন্দা। এছাড়া চীনে ভ্রমণজনিত কারণে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, হংকং, মেকাউ, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ ১৩টি দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
যেভাবে করোনা ভাইরাস ছড়ায় : বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, এ ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে। করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়।
লক্ষণ সমূহ :১. জ্বর ও কাশি। ২. শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া। ৩. অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া। ৪. ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।
ভ্রমণসংক্রান্ত পরামর্শ : যেহেতু এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস এবং এর ভয়াবহতা ও বিস্তার সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জানা এখনো সম্ভব হয় নাই, তাই ভ্রমণকালীন বিশেষ করে চীন থেকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ থেকে চীনে ভ্রমণকারীগণ সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বাভাবিক শ্বাসতন্ত্রেও প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অথবা কিছুদিনের জন্য বেশি জরুরি কিছু না হলে চীন ভ্রমণে বিরত থাকাই ভালো।
ভাইরাস থেকে বাঁচতে যা যা করতে হবে : ১. আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে দুই হাত দূরে থাকতে হবে। ২. বারবার প্রয়োজনমতো সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা, বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে কিংবা সংক্রমণস্থলে ভ্রমণ করলে। ৩. জীবিত অথবা মৃত গৃহপালিত/বন্যপ্রাণী থেকে দূরে থাকা। ৪. ভ্রমণকারীগণ আক্রান্ত হলে কাশি শিষ্টাচার অনুশীলন করতে হবে (আক্রান্ত ব্যক্তি হতে দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা, হাত ধোয়া, যেখানে-সেখানে কফ কাশি না ফেলা)।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাদি : ১. দেশের বিভিন্ন স্থল/নৌ ও বিমানবন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্কতা ও রোগের সার্ভেল্যান্স জোরদার করা হয়েছে। ২. হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রবেশপথগুলোতে নতুন করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সাতটি প্রবেশপথে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে আক্রান্ত দেশ থেকে আগত রোগীদের স্পর্শ না করে জ্বর পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ৩. বিমানবন্দর স্ক্রিনিং কার্যক্রম এই পর্যন্ত (২৭ জানুয়ারি, ২০২০) ২ হাজার ৪৭০ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। ৪. নতুন ভাইরাস সম্পর্কে চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ৫. চিকিত্সা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রোগ প্রতিরোধী পোশাক (PPE) মজুত রাখা হয়েছে। ৬. কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড নভেল করোনা ভাইরাস রোগীদের জন্য রেফারেল হাসপাতাল হিসেবে নির্দিষ্ট রাখা। ৭. হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা। ৮. বিমানের ভেতরের আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য বিমানের ক্রুদের মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে হেলথ ডিকলারেশন ফর্ম ও প্যাসেঞ্জার লোকেটের ফর্ম বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৯. ঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ভাইরাস প্রতিরোধসংক্রান্ত গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে এবং দ্রুত যোগাযোগের জন্য আইইডিসিআরে মোট চারটি হটলাইন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (হট লাইন নাম্বারসমূহ: +৮৮০১৯৩৭০০০০১১/ +৮৮০১৯৩৭১১০০১১/ +৮৮০১৯২৭৭১১৭৮৪/ +৮৮০১৯২৭৭১১৭৮৫) ১০. গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে অবহিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মাধ্যমে প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছে। ১১. সব জেলার সিভিল সার্জনদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য এবং চিকিত্সার লক্ষ্যে প্রয়োজনে পৃথক ওয়ার্ড/বেডের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চিকিত্সা এবং শনাক্তকরণের জন্য গৃহীত কার্যক্রম : ১. দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউতে কর্মরত চিকিত্সকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ২. ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করা হয়েছে। ৩. আইইডিসিআর ল্যাবরেটরিতে এই ভাইরাস শনাক্তরকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ৪. WHO এবং US CDC-এর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চিকিত্সা ও ল্যাবরেটরি শনাক্তকরণে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ৫. আইইডিসিআর Corona Control Room খোলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটর করছে।
অতীতের মার্স করোনা ভাইরাস (MERS—CoV) এবং সার্স করোনা ভাইরাস (SARS—CoV) থেকে বলা যায় সামনের দিনগুলোতে আরো মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। মানুষের ভৌগোলিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে যে কোনো সময়ে এই রোগ বাংলাদেশে প্রবেশ করার আশঙ্কা আছে। তাই এদেশে রোগটি যাতে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেতে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে।
No comments:
Post a Comment
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me.